এই সময়ে
আফরোজা অদিতি
এই সময়ে
মৃণাল-করবীর চেনাজানা কয়েক বছরের। মারণসময় না-এলে হয়তো দুই বাড়ির মধ্যে গভীর আন্তরিকতার সম্পর্ক তৈরি হতো এতদিনে! সন্তানের বিয়ে নিয়ে বাবা-মায়ের বিস্তর আকাঙ্ক্ষা থাকে; কিন্তু কোভিড সময়ে বিয়ে! এই সময়ে
মায়ের মনে শঙ্কা। বিয়ে হবে ছেলের; বউ আসবে। তারপর! তারপরের ভাবনাটাই তো গুরুত্বপূর্ণ। বর-বউ কীভাবে ‘দূরত্ব’ বজায় রেখে নতুন সম্পর্ক মানিয়ে নেবে? মানিয়ে নিতে পারবে তো? একুশদিন না-হোক কমপক্ষে চৌদ্দদিন তো মানতে হবে!
নতুন-সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘দূরত্ব’ বজায় রাখার চিন্তা কিছুতেই যাচ্ছে না! শঙ্কা-সংশয় থেকে মায়ের মনে ‘সম্পর্কের দূরত্ব’ বিষয়ক একটা ‘কিন্তু’ মনের মধ্যে গেঁথে থাকে! দুঃচিন্তা না-যাওয়ার কারণ আছে।
মা কাগজে পড়েছেন, ‘হু’-এর প্রতিবেদন বলছে পৃথিবী করোনামুক্ত হতে আরো সময় লাগবে! নতুন আর একটি প্রতিবেদন বলছে, করোনাভাইরাসের তাণ্ডবের মধ্যেই ভয়ঙ্কর মহামারির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি টেলিভিশন দেখছেন, পেপার পড়ছেন; জানতে-বুঝতে পারছেন।
বিশ্বের করোনা-পরিস্থিতি তো ভালো নয়! দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে-কমছে! বাড়ছে মৃত্যুসংখ্যাও। মা ভেবেছিলেন, করোনাকাল বেশিদিন থাকবে না, কিন্তু দিন দিন সময় বেড়েই চলেছে! সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে যাপিতজীবনের অনিশ্চয়তা এবং শঙ্কা!
এই সময়ে ছেলের বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না মায়ের। মেয়ের বাবা এমনভাবে বললেন যে, না-করা মুস্কিল হলো। ছেলের বাবা প্রস্তাব রেখেছিলেন, সময় একটু স্বাভাবিক হলে বউ নিয়ে আসবেন, কিন্তু মেয়ের বাবা বলেছেন, বারবার তারিখ বদল ভালো নয়! রেজিস্ট্রি করলে নিয়ে যেতে হবে মেয়েকে!
গত বছর জানুয়ারিতে পাকা দেখা-আশির্বাদ শেষে ২২ মার্চ দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিল, ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের পর দুপক্ষের সম্মতিতেই ভালো সময়ের অপেক্ষায় তারিখ পেছানো হয়েছে দুইবার। কিন্তু ভালোসময় আসছে না, কবে আসবে বলা যাচ্ছে না!
তাই দুপক্ষের সিদ্ধান্ত হয়েছে, কাবিননামা-রেজিস্ট্রি করিয়ে বউ নিয়ে আসার! নতুন বউ আসবে সুখের কথা, কিন্তু সুখের বদলে শঙ্কা কাজ করছে! এদিকে, বিয়ে উপলক্ষে মেয়ে এসে আটকে গেছে এখানে! লকডাউনের সময়ে যেতে দেননি ওদের!
নাতি আদিত্যের স্কুল খুলে গেছে, পড়াশোনা করাও দরকার ওর। সবদিকের বিবেচনায় বাড়ছে শঙ্কা, প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছেন না তিনি। বুকের ভেতরটা গুমোট হয়ে আছে তাঁর।
নিজেদের গাড়ি, ভয় নেই! কিন্তু মেয়ের বাড়ি। আত্মীয়-স্বজন ডাকবেন না মেয়েপক্ষ, কেউ আসবেন না তা আশা করা যায় না। আত্মীয়-স্বজন ডাকতে বারণ করবেন, সে বারণ মানবেন কেন মেয়েপক্ষ?
একসময় মনের শঙ্কা প্রকাশ করে ফেলেন মা, ‘এই সময়ে বিয়ে-ফুলশয্যা-বাসরঘর এসব কী ঠিক? এতজন যাওয়াও কি ঠিক?’ প্রশ্নের উত্তর পেলেন না, তাঁর প্রশ্ন ছড়িয়ে গেল শুধু ইথারে!
এই সময়ে মায়ের শঙ্কা একটা নয়, অনেক! তিনি বাইরে না-গেলেও, যেটুকু দেখতে-শুনতে পেয়েছেন তাতেই জীবন নিয়ে শঙ্কা বেড়েছে!
অনেকে নিষেধাজ্ঞা মানছে না, মানছে না সামাজিক দূরত্ব! রিকশা-সিএনজি চালকদের, যাত্রীদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই, লিফটে অনেকেই মাস্ক ছাড়া উঠছে-নামছে!
মাস্ক ব্যবহারে অসুখ থেকে নিজে বাঁচবে, বাঁচবে আশেপাশের মানুষ। কম আয়ুষ্কালের মানবজীবনে নিজের হেফাজত নিজেকেই করতে হবে! কেন বুঝছে না অবুঝের দল, যার যার জীবন তার তার!
মা, এসব দেখছেন-শুনছেন-ভাবছেন, আর ভাবতে ভাবতে অসহায় হয়ে পড়ছেন! অসহায় মা মনে শঙ্কা নিয়েও খেয়াল করেছেন, বাড়ির বিষণ্ন গুমোট-পরিবেশ কিছুটা হলেও কেটেছে! বিষণ্ন মনের মানুষগুলো অল্প হলেও হেসেছে। হৈচৈ না থাক, ওদের কথাবার্তায় সেই খুশির অল্পবিস্তর আমেজ বুঝতে পারছেন মা! শালা-জামাইয়ের মধ্যে ঠাট্টা-মশকরা চলছে!
আদিত্যকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগুচ্ছে জবা! এমন সময় আদিত্য মাস্ক হাতে মামাকে গিয়ে বলল, ‘মামা-মামা আমি মাস্ক পরতে পরতে একদম ‘মজিলা ফায়ারফক্স’ হয়ে গেলাম!’ ওর কথায় করোনাকালের সমস্যার কথা সবাই ভুলে হেসে উঠলো।
মায়ের মন কিছুক্ষণের জন্য হলেও, ‘ছেলেবউ আনা ঠিক হবে কি না’ সেই চিন্তামুক্ত হলো।
…………………
পড়ুন
কবিতা
গল্প
অণুগল্প
শিশুতোষ উপন্যাস
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত : পর্ব ১, পর্ব ২, পর্ব ৩, পর্ব ৪, পর্ব ৫, পর্ব ৬, পর্ব ৭, পর্ব ৮, পর্ব ৯, পর্ব ১০ (শেষ)
মুক্তগদ্য
ভ্রমণ
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি – ২য় পর্ব
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
সুনীল শর্মাচার্যের দশটি কবিতা
নাসিমা খাতুনের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা