শিশুতোষ উপন্যাস, ধারাবাহিক—পর্ব ৫
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত
আফরোজা অদিতি
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত
আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুলের বাগান। ওপাশে কলা বাগান। বাগানে ঢুকে পাশের কলাগাছ দেখেই ডিংডং লাফিয়ে ওঠে। কলা খাবো কলা খাবো বলে লাফাতে থাকে। বলে, ‘কলা ছিঁড়ে নিয়ে আসি। খিদে পেয়েছে।’
‘না, না ও গাছ আমাদের নয়, কলা ছিঁড়ো না। তা ছাড়া তোমার নাকি কলা খাওয়া বারণ।’ নিলেশ বলে।
‘এখন আমার খাওয়ার বয়স হয়েছে, খেতে পারি।’ ডিংডং বলে।
‘বেশ তো তোমার জন্য কলা নিয়ে আসছি। তোমাকে তো বলেছি পরের জিনিস না-বলে নিতে হয় না। পরের জিনিস না-বলে নিলে তোমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব শেষ।’ কথাগুলো বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো নিলেশ।
‘ঠিক আছে বন্ধু, না বলে কারো কোনো জিনিস নিবো না। কিন্তু আমার খিদে পেয়েছে, পাতা-পুতা খেতে ইচ্ছা করছে না আমার।’ কাঁদো কাঁদো কণ্ঠ ভূতের ছানার।
‘তুমি কেঁদো না, একটু দাঁড়াও’ বলে নিলেশ বাড়ির ভেতরে গেল। কিছুক্ষণ পরে চারটা কলা নিয়ে পাশের গাছের নিচে বসলো। হাত থেকে কলা নিলো অদৃশ্য একটি ছোট্ট হাত। কলা খেতে দেখলো।
কলা খাওয়া শেষ হলে নিলেশ জিজ্ঞেস করলো, ‘পেট ভরেছে।’
ছোট্ট উত্তর দিলো ডিংডং, ‘না।’
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, ‘তুমি ভেবো না আমার এতেই হবে। আজকে হয়নি—কয়েকদিন না খেয়ে আছি তো, তাই চারটে কলাতে পেট ভরেনি, খিদেটা বেশি লেগেছে।’
বাগানে ঘুরে বেড়াতে লাগলো ওরা। ঘোরার মাঝে টুকটাক কথা বলতে লাগলো। কথার মাঝখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াতে শুরু করলো ডিংডং।
তারপর একসময় বলল, ‘যদি অনুমতি দাও ঐ জামরুল গাছে উঠি, তারপর নারকেল গাছে, উঠবো।’
নিলেশ বলল, ‘কেন তুমি জামরুল, নারকেল খাবে?’
‘না পেড়ে নিয়ে বাড়ি যাই সবাই খাবে।’ আহ্লাদে গদগদ বলে ডিংডং।
নিলেশ কিছু বলার আগেই সামনে তাকিয়ে দেখে দুটো ডাব মাটিতে রাখছে ডিংডং। নিলেশের রাগ হলো, কিন্তু রাগ দেখালো না। রাগ দেখালে তো চলবে না, বুঝিয়ে বলতে হবে।
তাই আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করে নিলেশ। ‘তুমি তো এগুলো পাড়লে, বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাবো, কিন্তু সবাই যখন বলবে এগুলো পেলে কোথায়? কি বলবো, আমি তো গাছে চড়তে পারি না। আমি তোমার কথা বললে সবাই ভাববে আমার ওপর ভূতের আছর হয়েছে। সবাই ওঝা ডাকবে, শুকনা মরিচ পুড়িয়ে নাকে ধরবে, ঝাড়ু পেটাও করতে পারে তখন! তোমার তো কষ্ট হবে! শুধু তাই নয় ওঝা এসে তোমাকে তাড়িয়ে দিবে, আমার কাছে থাকতে দিবে না। হাতে-গলায় তাবিজ-কবজে ভরিয়ে দিবে। কী করবো তখন আমি; তোমাকে তো ছাড়তে পারবো না আমি।’ নিলেশ বলল।
নিলেশের কথা অবাক হয়ে শুনলো ডিংডং।
নিলেশ আরো বলল, ‘তুমি দেখা দাও ডিংডং। তোমাকে ছাড়তে চাই না আমি। তুমি আমার বন্ধু… এমন কিছু করো না যেন আমার থেকে দূরে যেতে হয় তোমাকে।’
‘ঠিক আছে, আর করবো না। চল।’ বলে হাত ধরলো ছোট ভূতের বাচ্চা। যেইমাত্র হাত ধরলো বাচ্চাটা অমনি ওকে দেখতে পেলো নিলেশ। ওকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরলো ওকে। তারপর ভূতের বাচ্চাটা নেচে নেচে গাইতে লাগলো—
.
ভয় পাচ্ছো পেয়ো না ভয়
আমি ভূতের বাচ্চা
শিখবো শুধু লেখাপড়া
কথা আমার সাচ্চা
.
ভূতেরা কেবল খারাপ হয়
এ কথাটা সত্য নয়
মন্দ-ভালো মানুষ যেমন
ভূতও তেমনি হয়
.
দেখো অ লিখেছি ক লিখেছি
এঁকেছি দেখো মিনার
খাতাটা দাও লিখবো আমি
যুদ্ধকথা বাংলার
.
শোনরে শোন মানুষ ভাই
ভয় করো না আর
পড়বো আমি দাও না বই
বন্ধু হবো সবার
.
ওর নাচ আর গানের সঙ্গে নিলেশও নাচতে লাগলো। নাচতে নাচতে বলল, ‘এই কবিতা তুমি কোথায় পেয়েছ?’
নাচতে নাচতে হাসতে হাসতে ডিংডং বলে, ‘গেইজ করো।’
‘তুমি দেখি ইংরেজিও পারো।’ নিলেশ অবাক হয় ওর ইংরেজি বলা দেখে, কিন্তু আরো অবাক হয় এই কবিতা তো ওর কবিতার খাতায় লেখা, এটি পেলো কি করে। ‘তুমি এই কবিতা পেলে কোথায়? এ তো আমার খাতাতে লেখা ছিল!’
‘সেখান থেকেই তো নিয়েছি।’ ডিংডং কথা বলে ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকে। তারপর নিলেশ আর ডিংডং হাত ধরাধরি করে নাচতে থাকে।
(চলবে)
…………………
পড়ুন
কবিতা
গল্প
শিশুতোষ উপন্যাস
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত : পর্ব ১, পর্ব ২, পর্ব ৩, পর্ব ৪, পর্ব ৫
মুক্তগদ্য
ভ্রমণ
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি – ২য় পর্ব
2 thoughts on “নিলেশ ও ছোট্ট ভূত, পর্ব ৫”