শিশুতোষ উপন্যাস, ধারাবাহিক—পর্ব ৭
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত
আফরোজা অদিতি
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত
ভাবনাগুলো মাথায় নিয়ে বাগান থেকে বের হয়ে আসে ওরা। ঘরে ফিরে দেখে চুপচাপ বসে আছে অভীক।
‘কী ভাবছো ভাই’ অভীকের পাশে বসতে বসতে বলে নিলেশ।
‘ভাবছি মায়ের কথা, বোনের কথা। মা ফিরেছে কিনা বাড়িতে জানি না। বোন মনে হয় কান্নাকাটি করছে।’ অভীকের চোখ ছলছল করে ওঠে।
ওকে দেখে বুকের মধ্যে কষ্ট হয় নিলেশের। বলে, ‘ভেবো না অভীক, মাকে বলতে শুনেছি পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা। ওখানে চাচ্চুর মোবাইল নম্বর দিবে, বিজ্ঞাপনটি দেখলে আন্টি মোবাইলে তোমার খবর নিতে পারবেন। তা ছাড়া তোমার মায়ের সেলফোন নম্বর কিংবা ল্যান্ডফোন নম্বর থাকলে দাও, কথা বলবে মা।’
অভীক ওর মায়ের নম্বর দিতে গিয়ে মোবাইলের শেষ তিনটি সংখ্যা মনে করতে পারে না, ল্যান্ডফোনের নম্বর মনেই করতে পারলো না। নম্বর মনে করতে না-পেরে ওর মুখ কষ্টে নীল হয়ে গেল।
নিলেশ তাড়াতাড়ি বলল, ‘ভয় করো না ভাই, কিছু হবে না। জোর করে কিছু মনে করতে যেয়ো না। বিজ্ঞাপন দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’ কথাগুলো বলল ঠিকই, কিন্তু নিলেশের মনে হলো : অভীক তো ছোট নয়, তবে সব কথা কেন ভুলে যাচ্ছে। যেদিন ওকে পেয়েছে, ওর জ্ঞান ফিরেছে, সেদিনও কিছু মনে করতে পারছিল না। সেদিন বাসা কোথায় তা ঠিকমতো বলতে পারলো না, আবার ভাইবোনের কথা ঠিকঠাক বলতে পারছে না! আজ আবার কোন ক্লাসে পড়ে, স্কুলের নাম কি —কিছুই বলতে পারছে না। ফোন নম্বরও না। সেদিন ওর নাম বলতে পেরেছিল, কিন্তু আজ আবার নিজের নাম মনে করতে পারছে না! তাহলে… নিলেশের মাথায় কিছু কি ঢুকছে না।
নিলেশ বসে আছে চুপচাপ বারান্দার সোফাতে।
কাঁধে হাত রাখে ডিংডং। ‘কী চিন্তা করছো বন্ধু। আমাকে বলো।’
‘তেমন কিছু না।’ নিলেশ ভাবিত মুখে বলে।
‘ঐ অভীক বন্ধুর ব্যাপারে ভাবছো তো, বেচারা কিছুই মনে করতে পারছে না।’ ডং বলে। ডং আরো বলে, ‘তুমি কিছু চিন্তা করো না। আমি থাকতে তোমার কোনো চিন্তা নেই, ‘নো চিন্তা ডু ফূর্তি’। চিন্তা করবে চিন্তামনি। একটু সবুর করো, সবুরে মেওয়া ফলে।’
ওর কথা শুনে হাসে নিলেশ। জোরে হাসতে গিয়ে মুখে হাত চাপা দেয়। কেউ দেখে ফেললে বিপদ, ডংকে তো আর কেউ দেখতে পায় না।
ডিংডং চোখ বুঁজে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলল, ‘অভীক বন্ধু তো চলে গিয়েছিল কোনো এক অচেনা জায়গায়। অচেতন পরে ছিল কতদিন, কেউ তো জানে না। অভীক বন্ধুকে যেখানে পেয়েছ, সেখানে নিয়ে চলো মনে পড়লেও পড়তে পারে!’
ওর কথা শুনে নিলেশ বলে, ‘অভীক একবার ওর বাসা বলে মগবাজার, একবার বলছে বাসাবো। ওর বাবা-মায়ের কথাও তো ঠিকমতো বলতে পারছে না! ভাইবোন কারো কথাই তো বলতে পারছে না! কী করি বুঝতে পারছি না।’
‘আমরা এক কাজ করতে পারি, বাসাবো থানাতে নিয়ে যেতে পারি।’ ডিংডং ওর চিন্তা দেখে হেসে বলে, ‘আমি থাকতে চিন্তা কী বন্ধু, সব বের করে দিবো, সব পাইয়ে দিবো।’
‘নিলেশ, এই নিলেশ অভীককে নিয়ে খেতে আয়।’ নিলেশের মা খেতে ডাকছে। অভীককে নিয়ে খাবার টেবিলে এলো নিলেশ। মা ওদের খাবার দিলো প্লেটে। খাবার সামনে নিয়ে বসে রইলো নিলেশ। ও ভাবছে ডিংডং-এর কথা। ডং কী খাবে। কলা দেখছে না টেবিলে। কলা আছে কি নেই, তাও জানে না নিলেশ। ডং তো কলা ছাড়া কিছু খায় না। পাতা-পুতা খেতে ভালো লাগে না ওর, আর ডাবের পানিতে কী অবস্থা তা তো নিজের চোখেই দেখেছে।
ডিংডংকে রেখে খেতে পারবে না। টেবিল থেকে উঠে খাবার ঘরে গেল নিলেশ। না কলা আছে। কলা আছে দেখে স্বস্তি পেলো নিলেশ। ওখান থেকে পটাপট চারটে কলা ছিঁড়ে নিয়ে ওর ঘরে রেখে এসে টেবিলে বসে।
মা বলেন, ‘টেবিল ছেড়ে গিয়েছিলি কোথায় নিলেশ। তোকে নিয়ে আর পারি না বাপু।’ মায়ের কথার কোনো উত্তর দেয় না নিলেশ। উত্তর দিলে মিথ্যে বলতে হবে, কিন্তু ও মিথ্যে বলে না। বলতে চায় না, মায়ের কাছে তো নয়ই। ওরা খাওয়ার পর্ব শেষ করে মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রাস্তায় বের হলো। অভীককে সঙ্গে যেতে বলল, কিন্তু শুয়ে রইলো অভীক।
নিলেশ রাস্তায় বের হলো সঙ্গে ডিংডং। রাস্তার একপাশে ঘন ঝোপ, ঝোপের সঙ্গে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেড়া দেওয়া। ঝোপে ফুল ফুটেছে, সাদা ফুল। আকন্দ। নিলেশ ফুল তুলতে গিয়েও হাত গুটিয়ে নিলো। মনে পড়ল ডিংডং-এর কথা। ফুল ছিঁড়তে নাই, ব্যথা পায় ওরা।
ওর মনে পড়লো একদিন মায়ের সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছিল সোনারগাঁও-এ। পিকনিক স্পটটি খুব সুন্দর ছিল। সামনে নদী ছিল। ফুলের বাগান ছিল। ফুলের বাগানে একটি গোলাপ গাছে একলা একটি ফুল ফুটেছিল, খুব সুন্দর! ভেবেছিল ছবি তুলে রাখবে।
মায়ের কাছে মোবাইল নিয়ে ছবি তুলতে গিয়েই দেখে ফুলটি নেই! কেউ একজন তুলে নিয়েছে। সেদিন ঐ একলা ফুলটির জন্য খুব কান্না পেয়েছিল ওর। দুই লাইন কবিতাও লিখেছিল :
.
একলা ফুল রঙিন হয়ে বাতাস পেয়ে দোলে
কে এসেছে কারা এসে ফুলটি নিলো তুলে।
.
কবিতার লাইন দুটি ভাবতে ভাবতে ফুলে হাত দিয়েও ফুল তুলল না নিলেশ।
ওকে ফুল তুলতে না-দেখে ডিংডং বলল, ‘খুব ভালো করেছ বন্ধু।’
(চলবে)
…………………
পড়ুন
কবিতা
গল্প
শিশুতোষ উপন্যাস
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত : পর্ব ১, পর্ব ২, পর্ব ৩, পর্ব ৪, পর্ব ৫, পর্ব ৬, পর্ব ৭
মুক্তগদ্য
ভ্রমণ
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি – ২য় পর্ব
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
সুনীল শর্মাচার্যের দশটি কবিতা
নাসিমা খাতুনের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা