শিশুতোষ উপন্যাস, ধারাবাহিক—পর্ব ৪
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত
আফরোজা অদিতি
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত
অদৃশ্য কণ্ঠও এসেছে নিলেশের সঙ্গে। অভীকের কথা মন দিয়ে শুনেছে অদৃশ্য কণ্ঠ। তখন কিছু বলেনি, এখন বলল, ‘অভীক ভাইয়ের ঘটনাটা খুব মজার! আমরা তো এমনি এমনি উড়ে যেতে পারি, এক নিমেষে যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারি, কিন্তু এভাবে যাওয়া যায় তা জানতাম না।’
নিলেশ ওর কথার কোনো জবাব না-দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি কে? অদৃশ্য হয়ে আছো কেন?’ তোমার নাম কি?’
নিলেশের প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো ওই কণ্ঠ। তারপর বলল, ‘তুমি তো আমাকে নদী থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এলে, বাড়ি নিয়ে এলে। আমার বন্ধু হবে বলেছিলে।’
‘তাই তো ভুলে গেছি। ক্ষমা করে দাও।’ নিলেশ বলে।
‘আমাকে কি তাড়িয়ে দিবে?’ অদৃশ্য কণ্ঠে ভয়।
ওকে অভয় দিয়ে বলে নিলেশ, ‘না দিবো না। তোমার নাম বলো। তোমার কথা বলো। আর একটা কথা, যদি তুমি খারাপ কাজ করো, তবে তাড়িয়ে দিবো। আগে তুমি কে বলো, তারপর দেখা যাবে কী করবো।’
‘আমি একটি ছোট্ট বাচ্চা ভূত। বাবা-মায়ের কাছে যেতে পারছি না। আগে তোমাদের লেবু গাছে থাকতাম। পরে একদিন ঐ বোতলে থাকতে শুরু করি। তারপর বোতল থেকে এখানে। তুমিই তো নিয়ে এলে।’ এবারে অদৃশ্য কণ্ঠ বলে।
‘তা তোমার বাবা-মায়ের কাছে যাচ্ছ না কেন?’ নিলেশ গম্ভীর কণ্ঠে বলে।
‘এখানে থাকতে ভালো লেগেছিল বলে বাবা-মায়ের কাছে যাইনি। তা ছাড়া আমাদের নিয়ম আছে, দশ বছরের আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলে আর বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাওয়া যায় না।’
‘তাহলে এলে কেন?’ নিলেশ বলে।
‘আমি তো আসতে চাইনি, বাড়ি থেকে ইচ্ছে করে আসিনি। খেলছিলাম এ-গাছ থেকে ও-গাছে লাফালাফি করার খেলা। হঠাৎ করে কী হলো…’ চুপ করে যায় অদৃশ্য কণ্ঠ।
‘কী হলো চুপ করলে কেন? বল।’
‘হঠাৎ এক ব্রহ্মদৈত্য দেখে ফেলে আমাকে আর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, আমি পড়ে গেলাম।’
‘আহা, ব্যথা পেয়েছিলে খুব।’ নিলেশের কণ্ঠে দুঃখ।
‘না, আমাদের খুব সহজে ব্যথা লাগে না, তবে একটু ব্যথা পেয়েছিলাম।’
‘কই বললে না তো, তুমি চলে যেতে পারতে, যাওনি কেন?’
‘ঐ যে বললাম, তোমাদের লেবু গাছে থাকতে ভালো লেগেছিল! যেদিন এসেছিলাম এখানে সেদিন গেলে যেতে পারতাম, কিন্তু পরে আর যেতে পারিনি। অবশ্য এ-কথা ঠিক নয় যে যাইনি, আমি গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের প্রহরী ঢুকতে দেয়নি! তাকে বললাম আমার মা খুব নরম মনের ভূত, কান্নাকাটি করবে, আমাকে যেতে দাও… তবুও যেতে দিলো না! আর এখন তো দশ বছর পুরো হয়ে গেছে, এখন তো আর যাওয়ার প্রশ্নই আসে না! তবুও লুকিয়ে যেতে চেয়েছিলাম পারিনি গো পারিনি…।’
ছোট্ট ভূতটার কথা শুনে দুঃখ হলো নিলেশের, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়লো। একটা ছোট্ট হাতের স্পর্শ পেলো নিলেশ।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল নিলেশ, ‘ও-সব কথা থাক, তোমার নাম কি?’
‘ডিংডং।’ ছোট্ট একটা উত্তর দিলো ভূতটা।
‘একটা কথা বলি মনে কিছু করো না, তোমার মা এখানে আসতে চান না।’ নিলেশ বলে।
‘আসতে চান, কিন্তু বাবা আসতে দিতে চান না। তা ছাড়া আমার মায়ের এখানকার পরিবেশ ভালো লাগে না।’
‘আমার মায়েরও ভালো লাগে না।’ একটু হাসে নিলেশ।
‘আমার মা-ও এখানে আসতে চান না।’
‘কেন আসতে চান না।’
নিলেশ ওর সেই হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলে। কীভাবে কুয়া থেকে শুরু হয়েছিল, আর সেখান থেকে শুরু করে কীভাবে বাসায় এসেছিল সবটুকু বলে।
তারপর বলে, ‘এখন আর সেই কুয়াটা নেই, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দাদিমা বন্ধ করেছেন। ওখানে ডিপ টিউবওয়েল বসিয়েছেন; ট্যাঙ্কিতে ভরে রাখা হয় পানি, তারপর সেখান থেকে দরকার মতো খরচ করা হয়। এসব কথা ছেড়ে চল বাগান ঘুরে দেখি।’
ওরা কথা বলতে বলতে হাঁটতে লাগলো বাগানে ।
(চলবে)
…………………
পড়ুন
কবিতা
গল্প
শিশুতোষ উপন্যাস
নিলেশ ও ছোট্ট ভূত : পর্ব ১, পর্ব ২, পর্ব ৩, পর্ব ৪
মুক্তগদ্য
ভ্রমণ
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকথা – ২য় পর্ব
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রাণী রাসমণি – ২য় পর্ব
4 thoughts on “নিলেশ ও ছোট্ট ভূত, পর্ব ৪”